ফাইল ছবি |
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যখন নির্বাচিত হন, তখন আশা করা হয়েছিল যে তিনি পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারবেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ আব্বাস আরাগচি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের জন্য পুরো এক সপ্তাহ নিউইয়র্কে কাটিয়েছেন। তিনি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বিয়ারবক এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামির মতো ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করেছেন। লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার করতে তাদের আবার আলোচনা শুরু করতে রাজি করানো। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেছিলেন।
কিন্তু হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর ইরানের সামরিক বাহিনীকে এ ধরনের চুক্তিতে রাজি করানো সংস্কারপন্থীদের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এখন ভালো সম্পর্ক গড়ার সময় নয়। পেজেশকিয়ান, এদিকে, দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে ইসরায়েলের হত্যার জন্য অবিলম্বে প্রতিশোধ না নেওয়ার জন্য পশ্চিমাদের অনুরোধে কোন লাভ হয়নি। পেজেশকিয়ান বলেছিলেন যে তাকে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং জিম্মি ও ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে অর্জন করা হবে। কিন্তু চুক্তি পূরণ হয়নি। কারণ, ইরানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট জোরালো চাপ প্রয়োগ করতে অস্বীকার করে। এটি পেজেশকিয়ানকে বিরক্ত করে। তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না যে হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল না। নেতানিয়াহু এমনকি নিউইয়র্ক থেকে হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন; এই বোমাটিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে এবং বৈরুতে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শনিবার হাসান নাসরাল্লার হত্যার পরপরই এক বিবৃতিতে লেবাননের জনগণ এবং গর্বিত হিজবুল্লাহকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সমর্থন করতে এবং (ইসরায়েলি) শয়তানি শাসন বন্ধ করার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ড ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক অবমাননা এবং তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা বা তার প্রতি তাদের অবিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন যে তিনি নিউইয়র্কে আমেরিকান কূটনীতিকদের বিভ্রান্ত করেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনা মন্ত্রী রন ডার্মার এবং নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনার পর জোর দিয়েছিল যে ইসরাইল 21 দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যের পর নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে তিনি এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না। আমেরিকার প্রায় বারো মাসের কৌশলের ব্যর্থতার প্রমাণ ধ্বংসস্তূপে রয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে গাজার খাদ্য সরবরাহ, নিরাপদ অঞ্চল তৈরি, রাফাহ আক্রমণ, যুদ্ধবিরতি শর্ত এবং সর্বোপরি অব্যাহত সংঘাত এড়ানোর বিষয়ে ভিন্ন কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানায়। ইসরায়েল আসলে এটা মানে না।
যতবারই নেতানিয়াহু মার্কিন পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেছেন, ততবার তিনি ওয়াশিংটনকে উপেক্ষা করেছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ ও হতাশ; কিন্তু নেতানিয়াহুর কৌশল নিয়ে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একেবারে সামনে। এদিকে ইসরায়েলে নেতানিয়াহু ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। অন্যদিকে কিছু আরব দেশ নাসরাল্লাহর জন্য শোক প্রকাশ করেছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো কার্যকর বিকল্প নেই। নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি জয়ী এবং সম্পূর্ণ বিজয়ের পথে রয়েছেন।
ইরানের পদক্ষেপ ইসরায়েলের চেয়ে কঠোর না হলে এখন ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহু টিকে থাকবে।
প্যাট্রিক উইন্টুর: কূটনৈতিক সাংবাদিক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন মাহফুজুর রহমান মানিক